Skip to main content

The Origin Of Science

  • ১)
বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলোর উৎস কি ? সব কিছুরই একটা উৎস আছে । বিজ্ঞানেরও আছে।আপনি যদি ডারউইনিস্টদের মত ভাবেন বিজ্ঞান শুধুমাত্র মানবজাতির জানার আগ্রহ থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।

আধুনিক বিজ্ঞানের এত উন্নতির পিছনে মূলত দুইটা কারণ আছে।একটা হল মধ্যযুগের মুসলিমদের দ্বারা বিজ্ঞান চর্চা , আরেকটা হল ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লব যা কিনা শুরু হয়েছিল Giordano Brunoর মাধ্যমে এবং শেষ হয়েছিল নিউটনের Principia Mathematica দিয়ে।এরপর মানবজাতিকে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে আর বেশি কষ্ট করতে হয়নি। এখানে অবাক করার বিষয় হল
আরবে বিজ্ঞান বিপ্লব ও ইউরোপে বিজ্ঞান বিপ্লবের পিছনে ছিল Theism বা আস্তিকতার ভূমিকা।আরো স্পষ্টভাবে বললে Monotheism এর কথা উল্লেখ করতে হবে।

বিজ্ঞানের মূল উৎসে যে Convictionটা (বিশ্বাস) আছে সেটা হচ্ছে  মহাবিশ্বের অসাধারণ সুবিন্যস্ততা,এর সুশৃঙ্খলতা।কিন্তু এই Convictionটি এসেছে কিভাবে?ক্যালভিন চক্রের (C3 Cycle) আবিষ্কারক,বায়োকেমেস্ট্রিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত মেলভিন ক্যালভিন এই বিষয়ে বলেন-
“As I try to discern the origin of that conviction,I seem to find it in a basic notion discovered 2,000 or 3,000 years ago, and enunciated first in the Western world by the ancient Hebrews: namely that the universe is governed
by a single God, and is not the product of the whims of many gods, each
governing his own province according to his own laws. This monotheistic
view seems to be the historical foundation for modem science.”[1]

বিজ্ঞানের উৎসের কথা আলোচনায় আসলে অনেকেই প্রথমে গ্রীকদের কথা বলে অথচ গ্রীকরা Polytheism এ বিশ্বাসী ছিল।তবে এটা ঠিক যে গ্রীকরা বিজ্ঞানের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল কিন্তু গ্রীকরা যে বিজ্ঞানকে উন্নত করেছিল সেটা গ্রীকদের আগেই এসেছিল।মেলভিন ক্যালভিনের উপরিউক্ত কথার গুরুত্বটা এখানেই।
মানবজাতিকে বিজ্ঞানের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে একত্ববাদে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি শিক্ষা দিয়েছিলেন।

সেই ব্যক্তি এখন সর্বাধিক পরিচিত  Hermes Trismegistus নামে। তাঁর পুস্তকগুলোকে একত্রে 'Corpus Hermeticum' বলা হয় এবং উনার একমাত্র পূণাংগ বইয়ের নাম হল Asclepius (The Perfect Word) ।

কিন্তু এই Hermes Trismegistus আসলে কে? 'Corpus Hermeticum' দেখলে বুঝা যায় যে Hermes একজন রিলেজিয়াস লিডার ছিলেন। Hermes এর শিষ্যরা যে তাঁর লেখাগুলোও বিকৃত করেছিল তাও বুঝতে পারা যায়।

Hermes Trimegistus অর্থ হল Thrice-Great Hermes । Thrice-Greatহল Hermes এর উপাধি।

আর এই উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি আর কেউ নন তিনি হলেন ইদরীস (আঃ ) । ইসলামিক স্কলাররা ইদরীস (আঃ) এর সম্পর্কে এই বর্ণনাই দিয়েছেন। আর বাইবেলে তাঁকে Enoch নাম দেয়া হয়েছে।

আরবদের নজরে এই বিষয়টা প্রথম ধরা পড়ে Sabianনাম এক ধর্মীয় গ্রুপের কারণে।Sabianদের রাজ্য যখন খলিফা আল-মামুনের হাতে পড়ে তখন খলিফা Sabianদের বলে তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কর না হলে তোমরা নিজেদের আহলে কিতাব বলে প্রমাণ কর যাতে তোমরা জিযিয়া দেয়ার যোগ্য হও আর এই দুটোর কোনটাই না করতে পারলে তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করব।[২]

 সৌভাগ্যক্রমে Sabianরা নিজেদের আহলে কিতাব হিসেবে প্রমাণ করতে পারে এবং তারা দাবি করে যে Hermes হলেন তাদের নবী । কুর'আনে তিন জায়গায় (২:৬২ , ২২:১৭ , ৫:৬৯) Sabian দের কথা বর্ণিত হয়েছে , আর পূর্ববর্তী স্কলাররা ইদরীস(আঃ)-কে Hermes হিসেবে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিলেন কারণ এই দুই ব্যক্তির উপাধি (Thrice-Great) একই ছিল।


ইবনে কাসীর (রহিমাহুল্লাহ্‌ ) তাঁর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ( ইংরেজী বই Prophets in the Quran দেখুন ) বলেছেন--

" ...Many of the Scholars allege that he wast he first to speak about this and they call him Thrice-Great Hermes ।" [৩]

The Vision of Hermes এ একটা ঘটনা আছে যেখানে একজন Divine Being কে Hermes এর সাথে কথা বলতে দেখা যায়।আর Deductive Reasoning অনুযায়ী সেই Divine Being ছিলেন একজন ফেরেশতা।ঘটনাটি ছিল এইরকম-

একদিন Hermes সব বস্তুর উৎস সম্পর্কে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তার মনে হতে থাকে যে তার আত্মা শূন্যে উঠে গিয়েছে। এরপর এক বিশাল সত্ত্বা তাঁকে নাম ধরে ডাকে।
Hermes তখন বললেন, “ Who art (are) thou (you)?”

"I am Osiris, the sovereign Intelligence who is able to unveil all things. What desirest (desire) thou(you)?"

Hermes: "To behold the source of beings, O divine Osiris, and to know God."

এই কথা বলার পর Hermes এক সুন্দর আলো দেখতে পান। Osiris এই আলো সম্পর্কে Hermes কে বলেছিলেন-
“The light thou (you) didst (did) first see is the divine intelligence which contains all things in potentiality,enclosing the models of all beings.” [৪]

Hermes পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করেছিলেন – “"Can souls die?"

Osiris জবাবে বলেছিলেন- "Yes,many perish in the fatal descent. The soul is the daughter of heaven, and its journey is a test. If it loses the memory of its origin, in its unbridled love of matter, the divine spark which was in it and which might have become more brilliant than a star, returns to the ethereal region, a lifeless atom, and the soul disaggregates in the vortex of gross elements." [৪]

উপরে Soul নিয়ে যে বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছেসেটা হল “THE COVENANTS WE HAD SWORN (GIVEN) TO ALLAH IN THE PRE-ETERNITY

ক্বুর’আনে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন-
“And (remember) when your Lord brought forth from the Children of Adam, from their backs (loins) their seed (offspring, descendants)and made them bear witness as to their own souls: Am I not your Lord? They said: “Yes”! We bear witness (We testify). Lest you should say on the Day of Resurrection: “Verily we were unaware of this.” (<a> Surah</a> Al-A’râf – 172)


“Did I not take an covenant from you, O Children of Adam!That you should not serve (be servants of) Satan? Surely he is an open enemy toYou,” (<a>Surah Yâ-Sîn – 60</a>)
(এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত দলিল পাবেন এখানে- http://bit.ly/1KAFESj)

Osiris কে সবাই চিনে Egyptian God হিসেবে অথচ Osiris এর ফেরেশতা হবার পক্ষে যৌক্তিক প্রমাণ আছে।তৎকালীন মিশরীয়রা Polytheist হওয়ায় এরা Osiris  এবং Hermes উভয়কেই গড বানিয়েছিল।
Ancient Polytheistরা যাই মনে করুক,Hermes যে একজন মানুষ ছিলেন তা এখন অনেকেই বিশ্বাস করেন। Renaissanceএর সময়কার বিজ্ঞানীরাও Hermesকে একজন মানুষ মনে করতেন।ব্রিটিশ হিস্টোরিয়ান  Frances A. Yates এই বিষয়ে বলেন-
 "It was on excellent authority that the Renaissance accepted Hermes Trismegistus as a real person of great antiquity and as the author of the Hermetic writings." [৫]



২)
হিস্টোরিয়ানদের ধারণা Hermes এর জন্ম হয়েছিল মিশরে। নির্দিষ্ট ভাবে কোন একদেশকে Hermes এর জন্মস্থান বলাকে আমি সমর্থন করি না।আমি বিশ্বাস করি Hermes এর জন্ম হয়েছিল মেসোপটেমিয়ার অন্তর্ভুক্ত কোন এক অঞ্চলে । হ্যাঁ সেটামিশর হতে পারে কারণ মিশর মেসোপটেমিয়ান অঞ্চলের অন্তুর্ভুক্ত ছিল, সাথে ইরাকও ছিল ।



 ইদরীস (আঃ) এর নাম ও তাঁর লেখাগুলোকে বিকৃত করায় বড় ভূমিকা পালন করেছে মূলত দুইটা দল । আর উভয় দলই ছিল Polytheism এ বিশ্বাসী। এদের একটা দল হল মিশরীয়রা আরেকটা হল গ্রিকরা ,রোমানদের ভূমিকাও আছে অবশ্য।

সম্ভবত মিশরীয়রাই সর্বপ্রথম ইদরীস (আঃ)-কে গড বানিয়েছিল।মিশরীয়রা ইদরীস(আঃ)কে কিংবা তার বিকৃত নামকে Thoth নাম দিয়েছিল। মিশরীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী Thoth লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন , বিজ্ঞানের উন্নতি করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা বিশ্বাস করত Thoth হল 'God of Knowledge and Wisdom' ।
এই Thoth এর নাম পরিবর্তন করে ইদরীস (আঃ)-কে গ্রিকরা Hermes নাম দেয়। এর অন্যতম শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৬৫ সালের একটা Inscription এ ।এই Inscription এর শেষের দিকে এইবাক্যটা লেখা ছিল--

"Isis , the great goddess , and Thoth, the three times great." [৬]

Three Times Great-উপাধির সংক্ষিপ্তরূপ হল Thrice-Great ,গ্রিকদের ভাষায় Trismegistus। এই উপাধিটা গ্রিকদের বইতে যেমন দেখা গিয়েছে তেমনি ইসলামিক স্কলারদের বই যেমন ইবন কাসীরের (রহ:)  বইতেও দেখা গিয়েছে।


আলেক্সজান্ডার দি গ্রেটের দ্বারা মিশর জয়ের মাধ্যমে গ্রিকরা Corpus Hermeticum এর সংস্পর্শে এসেছিল। এরপর তো গ্রিকদের মধ্যে একের পর এক বিজ্ঞানীর জন্ম হতে লাগল।এর উদাহরণ হিসেবে আর্কিমিডিসের কথা বলাই যথেষ্ট।

মিশরের Alexandria শহরে জন্ম নেয়া আর্কিমিডিসকে আমরা বিজ্ঞানীরূপে দেখছি মূলত ইদরীস ( আঃ)  এর শিক্ষার কারণে। একটা শিক্ষিত ও তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আধুনিক রাজ্য (মিশর)জয়ের মাধ্যমে যে একটা জাতির কতটা উন্নতি হতে পারে সেটা দেখিয়েছিল আলেক্সজান্ডার।

গ্রিকদের স্বভাবই ছিল মহান ব্যক্তিদের নিজেদের গড বা গডের পুত্র বানিয়ে দেয়া।কেন তারা এই পাগলামী করত জানি না তবে মহান ব্যক্তিদের নিজেদের গড বা গডের পুত্র বানিয়ে তারা হয়তো একটা সুবিধা নিত। হয়তো এইকাজ করে ওরা অন্য ধর্মের লোকদের বলত--

" এই বিজ্ঞ ব্যক্তি আমাদের গড/গডের পুত্র । আমাদের গড/গডের পুত্রকে নিয়ে তোমাদের অত গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। "
বলতে পারেন এই কাজ করে ওরা বিজ্ঞ ও মহান ব্যক্তিদের নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত।

গ্রিকরা ইদরীস (আঃ) কে তাদের গড Hermes এর পুত্র বানিয়ে দিয়েছিল। অর্থাৎ এরা বিশ্বাস করত যে Hermes Trismegistus হল তাদের গড Hermes এর পুত্র। ঈসা (আঃ)এর ক্ষেত্রে যে কাজ করা হয়েছিল ঠিক একই কাজও ওরা ইদরীস (আঃ) এর ক্ষেত্রে করেছে , Sabianরাও একই কাজ করে থাকতে পারে।


ইদরীস (আঃ) এর শিষ্যরাও বিকৃতি থেকে রক্ষা পায় নি। যেমন- Asclepious নামে এক শিষ্য ছিল Hermes এর। গ্রিকরা বিশ্বাস করত Asclepious হল তাদের গড Asclepious এর পুত্র।





৩)
" Mathematics is the language of Science"- বিজ্ঞানের ভাষা হল গণিত। গণিত ছাড়া বিজ্ঞান মেরুদন্ডহীন, পংগু আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল Mathematical Logic ছাড়া বিজ্ঞান হল ইনঅ্যাকুরেট ।তাই বিজ্ঞানের জন্ম গণিতের জন্মের সাথেই হয়েছে।গণিতের পূর্বে বিজ্ঞানের জন্ম হওয়া আর মাতার পূর্বে সন্তানের জন্ম হওয়া একই কথা।

ইদরীস (আঃ ) কে মু'জেযা হিসাবে Astronomy এবং Mathematics দান করা হয়েছিল।

ইমাম কুরতবী (রহিমাহুল্লাহ্‌) এর সূরা মারিয়ামের তাফসীর এবং মা'রেফুল ক্বুরআন থেকে ইদরীস (আঃ) সম্পর্কে জানা যায় যে--

"ইদরীস(আ) হলেন প্রথম মানব , যাঁকে মু'জেযা হিসাবে জ্যোর্তিবিজ্ঞান (Astronomy) এবং অংকবিজ্ঞান (Mathematics) দান করা হয়েছিল।তিনিই সর্বপ্রথম মানব ,যিনি আল্লাহর ইলহাম মতে কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন।তাঁর পূর্বে মানুষ সাধারণতঃ পোশাক হিসাবে জীব জন্তুর চামড়া ব্যবহার করত। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয় ।তিনি অস্ত্র নির্মাণ করে ক্বাবীল গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। " [৭]



এই বিষয়ে অনেকেই একমত যে , ইদরীস(আঃ) -ই প্রথম লেখার পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন। আর মানুষ জানতে পেরেছে যে মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ানরা প্রথম লেখার সূচনা করেছিল আর এই পদ্ধতিই সম্ভবত ইদরীস (আঃ) লেখ্য পদ্ধতির বিকৃত কিংবা অবিকৃতরূপ।

 তাছাড়া ইদরীস(আঃ)/Hermes জোর্তিবিদ্যার সাহায্যে রেখা টানতে দক্ষ ছিলেন। আর এই রেখা টানার বিষয়টা Geometryর সাথে সম্পর্কিত। 

ইবনেকাসীর (রহিমাহুল্লাহ্‌ ) এর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া বইতে তিনি লিখেছিলেন-

" ইবন ইসহাক (র) বলেন , ইনিই সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লেখার সূচনা করেন।... কেউ কেউ বলেন ,মু'আবিয়া ইবন হাকাম সুলামী-এর হাদীসে এ ইদরীস (আ)-এর প্রতিই ইংগিত করা হয়েছে যে , রসূলুল্লাহ্‌(সঃ)-কে জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomy) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, একজন নবী ছিলেন যিনি এ বিদ্যার সাহায্যে রেখা টানতেন।সুতরাং যার রেখা চিহ্নতাঁর রেখা চিহ্নের অনুরূপ হবে তাঁরটা সঠিক। বেশ কিছু তাফসীরকার মনে করেন যে,ইদরীস (আ)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।" [৮]


Hermes Trismegistus এর শিক্ষার মধ্যে Mathematics ছিল অন্যতম। এই কারণেই মিশরে বাঘা বাঘাGeometrician এর জন্ম হয়েছিল।
কিন্তু মিশরীয়রা জ্যামিতির প্রাক্টিক্যাল ব্যবহার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ,ফলে থিওরেটিক্যাল জ্যামিতি ধীরে ধীরে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে লাগল।[৯]  পিরামিড হল এই প্রাক্টিক্যাল জ্যামিতির উদাহরণ।

ইদরীস(আঃ) এর বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা পুস্তিকা আকারে ছিল আর এই পুস্তিকাগুলোর কারণেই আমরা মিশরের পিরামিড দেখতে পারছি। The Secret Teachings of All Ages বইয়ের লেখক Manly P. Hall এই বিষয়ে লিখেছিলেন-
“By the Egyptians the Great Pyramid was associated with Hermes, the god of wisdom and letters and the Divine Illuminator worshiped through the planet Mercury.” [১০]

Mysticist Edgar Cayce বলেছিলেন যে Hermes ছিলেন আটলান্টিসের একজন ইঞ্জিনিয়ার যিনি পিরামিড ডিজাইন ও নির্মাণ করেছিলেন।[১১]

পক্ষান্তরে গ্রিকরা থিওরেটিক্যাল চিন্তা করতে পছন্দ করত।গ্রিক গণিতবিদ পিথাগোরাস মিশরীয়দের কাছ থেকে জ্যামিতির শিক্ষা লাভ করে।এরপর জন্ম নেয় পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্য- কোন একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভূজের উপর অংকিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ঐ ত্রিভুজের অপর দুই বাহুর উপর অংকিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান ( a^2+b^2=c^2)। পিথাগোরাসের এই উপপাদ্যটি অসাধারণভাবে প্রমাণ করেছিলেন আরেক গণিতবিদ ইউক্লিড। ইউক্লিড আবার মিশরের Alexandriaয়  শিক্ষকতা করত। যেভাবেই দেখেন না কেন বিজ্ঞানের শুরুর ইতিহাস আপনাকে মেসোপটেমিয়াতেই নিয়ে যাবে কারণ Hermes বা ইদরীস (আঃ) এর কারণেই মিশরে এই বিদ্যার আগমন হয়েছিল এবং জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানের।

৪)

ইদরীস (আঃ)এর লেখাগুলো যে কতটা শক্তিশালী ছিল তা এখনো Corpus Hermeticum পড়লে বুঝা যায় যদিও এই বইটা বিকৃত হয়ে গিয়েছে।

আমার কাছে Corpus Hermeticum এর ইংরেজী অনুবাদটা আছে, ভাবিনি বইটা এত গভীর পর্যায়ের হবে। যদি আপনার ইসলামী আক্বীদাগত জ্ঞান একেবারেই কম থাকে তাহলে এটা পড়ার দরকার নাই।কারণ এই বইটা হল ক্বুরআনে বর্ণিত Sabianদের ধর্মের নতুনরূপ Hermeticism ধর্মের ধর্মগ্রন্থ।

ইদরীস (আঃ) এর লেখার শক্তি সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।তাঁর লেখার অনেকটাই হয়তো বিকৃত হয়ে গিয়েছে তারপরো তাঁর লেখার শক্তি অনুভব করা সম্ভব।
 Corpus Hermeticum এ জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা কিছুটা ধাঁধার মত করে দেয়া হয়েছে । উপমার সাহায্যে এবং পরোক্ষভাবেও অনেক কথা বলা হয়েছে, বিজ্ঞানের অনেক বিষয় সম্পর্কে অল্প-স্বল্প Hintও দেয়া হয়েছে ।

তাই এই বই নিয়ে গবেষণা করে যারা বড়বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছেন তারা এই বই থেকে নিংড়িয়ে তথ্য বের করেছেন। জাবির ইবন হাইয়্যান , কোপার্নিকাস, ব্রুনো ,কেপলার , নিউটন এরা সবাই এই বই থেকে তথ্যগুলো নিংড়ে বের করেছেন। তার মানে এই না যে এই বইয়ের Puzzle টাইপের কথাগুলো সব  অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।

ধাঁধার একটা বৈশিষ্ট্য হল যে ধাঁধা সমাধান করার জন্য একজন ব্যক্তিকে পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখতে হবে।এছাড়া এমন ধাঁধাও আছে যা কিনা পাঠককে ভুল সমাধানের দিকে ঠেলে দেয়।একটা সহজ এবং কমন ধাঁধার উদাহরণ দেই--

"লুসির মায়ের তিন সন্তান ,একজনের নাম হল এপ্রিল আরেকজন হল মে। ৩য় সন্তানের নাম কি?"

যারা এই ধাঁধাটা প্রথম দেখছেন তাদের ব্রেনে চট করে 'জুন'নামটা চলে আসবে। কারণ ব্রেন শর্টকার্ট নিতে পছন্দ করে আর ধাঁধাটাও উত্তরদাতার ব্রেনকে শর্টকার্ট পদ্ধতিতে যেতে ফোর্স করছে এবং ভুল উত্তর দিতে প্ররোচিত করছে ।কিন্তু যখন উত্তরদাতা আরেকটু চিন্তা করবে তখন সে বুঝবে যে ধাঁধার উত্তর ধাঁধাতেই দেয়া আছে যেটা হল 'লুসি'।

এখন এই ধাঁধাটা আমি বাংলায় জিজ্ঞেস করলে আপনার ব্রেন এই ডাটা এনালাইস করতে কম সময় নিবে আবার আমি যদি এটা ইংরেজীতে করতাম তাহলে দেখা যেত একই ডাটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করারফলে আপনার ব্রেন ডাটাকে এনালাইস করতে সময় বেশি নিচ্ছে।

এই ধাঁধাটি পাঠককে শুধুমাত্র একটা ভুল উত্তরে যেতে ফোর্স করছে ।এখন কোন ধাঁধা যদি একাধিক ভুল উত্তরের দিকে যেতে ফোর্স করে এবং সাথে সাথে সেই ধাঁধার ভাষাটাও যদি অরিজিনাল থেকে বিকৃত হয় তাহলে সেটা সমাধান করতে অনেক কষ্ট হবে এবং নিউটন , কোপার্নিকাস , ব্রুনোদের মত মাথার প্রয়োজন হবে।
 



যেহেতু Corpus Hermeticum বিকৃত বই তার উপর ধাঁধাগুলো কিংবা উপমাগুলো যদি জটিল হয় তাহলে এই বইয়ের তথ্যগুলো Decode করতে অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেকে তো Decoding করতে গিয়ে Corpus Hermeticum এর তাফসীরও লিখেছেন।নিউটনও Emerald Tablet এর তাফসীর লিখেছিলেন।
এখন আমি Hermetic Text একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

প্রথমটা হল-- The Corpus Hermeticum এর Book 2 এর প্রথম অনুচ্ছেদ যেখানেHermes তাঁর শিষ্য Asclepious এর সাথে Astronomy সম্পর্কে আলোচনা করছেন। এখানে বলা হয়েছে--
H (Hermes) :- Is not everything that is moved , O Asclepius , moved in something and by something ?

A (Asclepious) :- Certainly.

H (Hermes) :- Must not that in which something is moved be greater than what is moved?
A :- It must.

H (Hermes) :- Must not the mover be more powerful than the moved ?

A:- Definitely more powerful.

H:- And Must not that in which movement occurs have a nature opposite to that of the moved?

A:- Yes, Indeed. [১২]

এই অনুচ্ছেদে Planetory Motion এর কথা বলা হয়েছে। সূর্য যে গ্রহগুলোকে ঘুরাচ্ছে সেটাই বলা হয়েছে। বেশি কিছু বলছি না, শুধু বলব ভারি বস্তুর Gravitional Pull হালকা বস্তুর থেকে বেশি। আর সূর্য পৃথিবীর থেকে 300,000 গুণ ভারি।এখন আবার আমরা জানতে পেরেছি যে আমাদের সোলার সিস্টেমও 225-250 million সময় নেয় বিশাল  বড় Milky Way গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমণ করতে।
নিউটন এই রকম ব্যাখ্যাই দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে এই ব্যাখ্যার কারণে তাকে Bentley Paradox এর সম্মুখীন হতে হয়েছিল।[১৩]

  • ৫)
ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লবে যে  দুইজন ব্যক্তির ভূমিকা অবর্ণণীয় তাদের  একজন হলেন Copernicus আরেকজন হলেন Giordano Bruno। কোপার্নিকাস ও ব্রুনোকে মুক্তচিন্তার প্রতীক বলে অনেকে বিবেচনা করে। কোপার্নিকাসও ব্রুনো দুইজনই বাইবেলের Geocentric Theory (পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগৎ) এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন এবং Heliocentric Theory (সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগৎ) কে উপস্থাপন করেছিলেন।

ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় এই দুইজনকে নাস্তিক ও Agnostic (অজ্ঞেয়বাদী)রা খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখে,এই দুইজন ছাড়া গ্যালিলিওকেও এরা শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এই তিনজনের কথা উল্লেখ করে নাস্তিকরা ও Agnosticরা প্রায়ই বলে যে " ধর্মের সাথে বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক , বিজ্ঞানও ধর্ম আলাদা বিষয়" ।

আসলে নাস্তিক ও Agnostic রা ব্রুনো , গ্যালিলিওর ,কোপার্নিকাসের ধর্মবিরোধী কর্মকান্ডের কথা জোরে-শোরে প্রচার করলেও তাদের সম্পর্কে অনেক কথাইএরা সহজে বলে না। ব্রুনো , গ্যালিলিওদের বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টির পিছনে যে Hermes Trimegistus নামের একজন ধর্মীয় গুরু ছিলেন সে কথা এরা মুখেই আনে না। আমার তো মনে হয় এরা জানেই না এই ব্যাপারে! জানলে নিলর্জ্জও বেহায়ার মত ধর্মের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের অবস্থান প্রমাণ করতে এই ব্যক্তিদের উদাহরণ এরা ব্যবহার করত না।

এখন দেখি কিভাবে কোপার্নিকাসও ব্রুনো Hermes বা ইদরীস (আঃ) এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ।

ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল কোপার্নিকাসের লেখনী দ্বারা। কোপার্নিকাস তার On the Revolutions of the celestial spheres বইতে প্রথম Heliocentric Theory প্রকাশ করেছিলেন। ক্যাথলিক চার্চ যে শিকল দিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনাকে বন্দী করে রেখেছিল সে শিকলে প্রথম জোরালো আঘাত হানে কোপার্নিকাসের এই বইটা।

মূর্খ নাস্তিকের দল কোপার্নিকাসকে নিয়ে বাহাদুরি করলেও কোপার্নিকাস মূলত Hermes এর সাহায্য নিয়েই তার থিওরিটা তৈরী করেছিলেন। তিনি তো তার On the Revolutions of the celestial spheres বইতে Hermes Trimegistus এর কথা সরাসরি উল্লেখ করেছিলেন। এই বইতে কোপার্নিকাস বলেছিলেন--

" Accordingly (considering the sun's central position) , it is not foolish that it has been called the lamp of universe , or its mind , or its ruler . (It is ) Trismegistus' visible God... " [১৪]

ধর্মবিরোধীরা কোপার্নিকাসের থেকে বেশি মাতামাতি করে ব্রুনোকে নিয়ে কারণ ব্রুনো ইতিহাসের সেরা খ্রিস্টান বিরোধীছিল। কিন্তু তার মানে এই না যে ব্রুনো নাস্তিক ছিল কিংবা সে অন্য কোন ধর্মের অনুসারী ছিল না। ব্রুনো একজন কট্টর Hermeticist ছিল এবং সে Hemeticism ধর্মের প্রচারক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন।

ব্রুনোর বিখ্যাত বই " On the infinite universe and worlds " এ ব্রুনো "Infinite Universe Theoryর" কথা বলেছিলেন ।ব্রুনো এই থিওরিটা প্রস্তুত করেছিলেন Hermes এর " Asclepius " বইয়ের সাহায্য নিয়ে।[১৫]

Hermes এর প্রতি ব্রুনোর এতটাই ভালবাসা ছিল যে ব্রুনো Giordanisti নামে একটা গুপ্তসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই গুপ্তসংঘের উদ্দেশ্য ছিল Hermeticism এরপ্রচার করা এবং এটা প্রতিষ্ঠা করা। ব্রুনো বিশ্বাস করত যে খ্রিস্টান ধর্ম হল একটা বিকৃত ধর্ম , Hermes এরধর্মকেই সে সত্য বলে বিশ্বাস করত। তার প্রতিষ্ঠিত এই সংঘের সদস্যরাও এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন , হয়তো এই সংগঠন এখনো আছে কিংবা অনেক আগেই এর বিলুপ্তি ঘটেছে।

অনেকেই মনে করেন যে Heliocentric Theory প্রচারের দায়ে ব্রুনোকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল কিন্তু সত্য কথা হল Hemeticism প্রচার করার দায়েই তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। এই ভুল তথ্যের কারণে অনেকে ব্রুনোকে বলে 'Martyr for Science' অথচ ব্রুনোকে বলা উচিত 'Martyr for Hemeticism ' । তাই অবাক লাগে যখন দেখি নাস্তিকরা ব্রুনোর উদাহরণ দিয়ে ধর্মকে পচায় এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে বিজ্ঞানের সাথে আস্তিকতা সাংঘর্ষিক।




  • ৬)
আধুনিক বিজ্ঞানের শুরুটা যাদের হাতে হয়েছিল তারাও Hermeticims দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে গ্যালিলিও ও নিউটন।

গ্যালিলিও গ্যালিলাই :-
The Father of Modern Science , গ্যালিলিও গ্যালিলাই ১৫৬৪ সালে ইতালির পিসাতে জন্মেছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান অনেক। গ্যালিলিও বিজ্ঞানের Experimentation পদ্ধতির প্রচার করেছিলেন এবং তার পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারাই পরবর্তীতে বিজ্ঞান জগতে Experimentation Method এর আগমন ঘটে। গ্যালিলিও হাইপোথিসিসের উপর Experiment করে সেই হাইপোথিসিসকে কিভাবে শক্তিশালী করতে হয় সেটা দেখিয়েছিলেন।

গ্যালিলিওর যুগে কোপার্নিকাস এর Heliocentric Theory হাইপোথিটিক্যাল স্টেজে ছিল।কোপার্নিকাসের থিওরিকে প্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন গ্যালিলিও।টেলিস্কোপের দ্বারা সৌরজগত পর্যবেক্ষণ করে তিনি কোপার্নিকাসের থিওরির সত্যতা প্রমাণ করেন। মূলত গ্যালিলিও Hermes Trismegistus এর এই কথাটাকে প্রমাণ করেছিলেন--
"For the sun is situated at the centre of the cosmos, wearing it like a crown."  [১৬]

হ্যাঁ এটা সত্য যে গ্যালিলিও সরাসরি Hermes এর কথা উল্লেখ করেনি যেমনটা ব্রুনো,কোপার্নিকাস ও নিউটন করেছেন। এর কারণও আছে। ১৬০০ সালে গ্যালিলিওর বয়স যখন ৩৬ ছিল তখন ব্রুনোকে পাবলিকলি আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় । চার্চ পাবলিকলি এই কাজ করেছিল যাতে কোন ফিলোসফার কিংবা বিজ্ঞানী ব্রুনোর মত কথাবার্তা না বলে। অর্থাৎ ব্রুনোর মৃত্যুর পর Hermesকে নিয়ে কথা-বার্তা বলা একেবারে ট্যাবু হয়ে যায়।

এইজন্য ব্রুনোর দ্বারা ইন্সপার্য়াড হওয়া সত্ত্বেও গ্যালিলিও তার প্রথম বইয়ে ব্রুনোর নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি আর এই কারণে কেপলার গ্যালিলিওর সমালোচনাও করেছিলেন।

গ্যালিলিও যে ব্রুনোর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন সেটা গ্যালিলিওর Dialogue Concerning the Two Chief World Systems বইটা দেখলে বুঝা যায় । এই বইটার সাথে ব্রুনোর The Ash Wenesdayর মিল আছে। আর গ্যালিলিও তার এই বইয়ের কারণেই চার্চের ক্রোধের মুখে পড়েন।

এছাড়া গ্যালিলিও Hermeticistদের উঠা-বসা করত , একজনের সাথে তো খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ।সে ব্যক্তির নাম হল Giovanni Domenico Campanella । Campanella ও ব্রুনো একই পথের পথিক ছিলেন । তাই এই দুইজনের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তি Hermetica সম্পর্কে অবশ্যই ভালভাবে জেনেছিলেন। গ্যালিলিও এর ব্যতিক্রম নয়।

ব্রুনো যখন Giordanisti নামের গুপ্ত সংঘ প্রতিষ্ঠা করে জোরেশোরে Hermeticism প্রচার করছিল তখন গ্যালিলিও ব্রুনোর এই কাজ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। প্রশ্ন হল- গ্যালিলিও কি এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন? ড্যান ব্রাউনের "Angels and Demons" বইতে ব্রাউন গ্যালিলিওকে 'Illuminati' সদস্য বলেছেন কিন্তু এটা ভুল তথ্য।এই কারণে ব্রাউনের "Angelsand Demons" বইটা সমালোচিত হয়েছিল। The Da vinci code বইটাও হিস্টোরিকাল একুরেসির অভাবে সমালোচিত হয়েছিল।

তবে হ্যাঁ ব্রাউন যদি 'Illuminati'র বদলে 'Giordanisti'র কথা বলত তাহলে হয়ত তার বই সমালোচনা এড়াতে পারত কারণ গ্যালিলিওর যুগে 'Giordanisti'র অস্তিত্বছিল , 'Illuminati'র ছিলনা।

গ্যালিলিওর 'Giordanisti'র সদস্য হওয়ার পক্ষে তেমন কোন শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না । কিন্তু এটা সত্য যে গ্যালিলিও ব্রুনোর চিন্তা-ভাবনা দ্বারা তীব্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা কিনা ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লবের ক্ষেত্রে Hermes এর কৃতিত্বকেই স্বীকৃতি দেয়।

স্যার আইজাক নিউটন :-

গ্যালিলিওর মৃত্যুর সালেই (১৬৪২) ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন আইজাক নিউটন। । কৃষকের ছেলে হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন যে নিউটনও কৃষকই হবেন কিন্তু ক্যামব্রিজড থেকে পাশ করা নিউটনের এক আংকেল তাকে এক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।এর মাধ্যমে জ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু হয় নিউটনের।

Trinity College এ পড়াশুনা করলেও নিউটন খ্রিস্টানদের 'ট্রিনিটি'তে বিশ্বাস করতেন না ।ব্রুনোর মত নিউটনও বুঝতে পেরেছিলেন যে খ্রিস্টান ধর্মকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। এইজন্য হয়তো অন্যান্য ফিলোসফির প্রতি নিউটনের বেশি আগ্রহ ছিল।

Alchemyর প্রতি নিউটনের অনেক বেশি আগ্রহ ছিল ।Alchemy কে বিজ্ঞান থেকে বিচ্যুত শাখা বলে গণ্য করা হয়। কারণ Alchemyতে কেমিস্ট্রির আলোচনার সাথে সাথে ম্যাজিক নিয়েও অনেক আলোচনা আছে। Alchemy নিয়ে গবেষণা করার জন্য Alchemistদের "Divine Scripture"গুলো ঘাটতে হত । নিউটনও এর ব্যতিক্রম ছিলেননা।

নিউটনের মৃত্যুর পর নিউটনের পারসোনাল লাইব্রেরিতে Alchemyকে নিয়ে লেখা ১৬৯টি বই পাওয়া গিয়েছিল। নিউটনও Alchemyর উপর অনেক লেখা লিখেছিলেন। ইংল্যান্ডের জন্য লজ্জার বিষয় হল যে নিউটনের এই লেখাগুলো ইহুদিদের "Jerusalem National Library" তে আছে।নিউটনের এই লেখাগুলো সাংকেতিকভাবে লেখা যার সবগুলো এখনো Decode করা সম্ভব হয় না বরং এখনো হয়তো Decoding এর কাজ চলছে।
নিউটন ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করায় Hermesএর নাম উল্লেখ করতে তিনি দ্বিধান্বিত হননি । নিউটন তার Alchemical লেখাগুলো Hermes এর নাম প্রায়ই উল্লেখ করেছেন। এমনকি নিউটন Hermes এর"Emerald Tablet" এর ব্যাখ্যাও লিখেছেন ।(গুগলে সার্চ দিলে পাবেন।)

নিউটন যে Hermeticism দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তা 1966 সালে জনসম্মুখে তুলে আনেন "Leeds University"র দুইজন লেকচারার 'J.Edward McGuire' এবং'Piyo M. Rattansi' ।

Indiana Universityর প্রফেসর Richard Westfall নিউটনের Hermeticism সম্পর্কে বলেছেন--

"In Newton , peculiarly Hermetic notions fostered the crucial development of his scientific thought." [১৭]

নিউটন তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য Corpus Hermeticum এর সাহায্য নিয়েছিলেন- এটা সত্য কিন্তু তার মানে এই না যে নিউটন বুদ্ধিমান ছিলেন না। তিনি অবশ্যই একজন Genius ছিলেন কারণ Hermetica থেকে তথ্য নিংড়ে বের করার জন্যও ইন্টিলেকচুয়াল পাওয়ার ভাল থাকতে হয় ।

  • ৭)
Hermetica সম্পর্কে লেখিকা Lynn Picknett  বলেছিলেন-

" It is universally acknowledged that if the Principia (Newton's book) had never been written , our modern technological  world would not exist. But without the Hermetica , Newton would never have written the Principia." [১৮]


 Hermeticaর জন্যই যে  বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে তা Hermetica  থেকে অন্যান্য যেসব আবিষ্কার হয়েছে তার একটা ছোটলিস্ট দেখলেই বুঝা যেতে পারে। Lynn Picnett এর The Forbidden Universe: The origins of science and the search for the mind of God বইটাতে এইরকম একটা লিস্ট আছে।আমি শুধু লিস্টে উল্লেখিত আবিষ্কারগুলোর কথা লিখছি এখানে যা কিনা ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লব ঘটিয়েছিল--

*The Heliocentric Theory

*The laws of planetary motion

*The concept of an infinite universe

* The idea of other solar systems containing habitable planets

*The theory of gravity

*The Newtonian laws of motions

*The circulation of blood

*The Earth's Magnetism

*The basic principles of information theory and the basic principles of computer science


  • ৮)
শুধুমাত্র থিওরি ও হাইপোথিসিসের দ্বারাই বিজ্ঞানের জগৎ সৃষ্টি হয় নি। গুটি কয়েক থিওরি ও হাইপোথিসিস সম্পর্কে জানলেই বিজ্ঞান বুঝা যায় না। বিজ্ঞান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে হলে বিজ্ঞানের ইতিহাস, Philosophy of Science সম্পর্কে জানতে হবে, কিভাবে থিসিস ও হাইপোথিসিসের সৃষ্টি হয় তা বুঝতে হবে, বুঝতে হবে "Inductive ও Abductive Inference"।

যারা বিজ্ঞানের সাহায্যে ধর্মকে পচাতে চায় তাদের প্রায় সবাই এইসব বিষয় সম্পর্কে জানে না , জানলেও জানে অস্পষ্টভাবে।


এটাও মনে রাখা উচিত যে শুধুমাত্র মানুষের জানার আগ্রহ থেকে বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়নি ,জানার আগ্রহ  বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করেছে মাত্র এবং এখনো করছে। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান এসেছে আল্লাহ্‌ তাআলার ইচ্ছায়। তিনি আমাদেরকে জানাতে চেয়েছেন বলেই আমরা জানতে পেরেছে।বিজ্ঞানের ভাষা Mathematics নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে Mathematics এর বেসিক বিষয়গুলো মানুষের দ্বারা আবিষ্কার করা সম্ভব না। প্রকৃতিতে আমরা যে Rational Order দেখতে পাচ্ছি তা আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টি এবং এই Rational Orderকে প্রকাশ করতেই গণিতের আগমন। Johannes Kepler মোটেও ভুল বলেন নি যে-

“The chief aim of all investigations of the external world should be to discover the rational order which has been imposed on it by God, and which he revealed to us in the language of mathematics.” [১৯]

অনেক ভাই বিজ্ঞানকে খুব তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখে কারণ বিজ্ঞানের জগতকে এখন লিড দিচ্ছে সেকুলার Agnosticরা । যারা বিজ্ঞানকে তুচ্ছভাবে দেখেন তাদেরকে বলব , বিজ্ঞান সেকুলার ও নাস্তিকদের পৈতৃক সম্পত্তি না। আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে জানার অধিকার সবারই আছে। বিজ্ঞান জানতে গেলে আপনাকে নাস্তিক বা এগনোস্টিক হওয়া লাগবে বিষয়টা এমন না। বরং যেসব মূর্খ বলে
"বিজ্ঞান অনুযায়ী স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই" তারা বিজ্ঞানের উৎস সম্পর্কেই অজ্ঞ।

একটা কথা মনে রাখবেন, জ্ঞান অর্জন করা খারাপ কোন কাজ না। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের সময় আপনি কোন বিষয় সম্পর্কে আগে জ্ঞান অর্জন করতে চান সেটা আপনার জানা দরকার। অবশ্যই ইসলামের প্রাথমিক বিষয়গুলো সম্পর্কেই সবার আগে জানতে হবে যা কিনা আপনাকে দৃঢ়ভাবে ইসলামিক আইডিওলজি ফলো করতে সাহায্য করবে। পৃথিবীর একমাত্র সত্য আদর্শের অনুসারী হতে পারলে আপনি যেকোন বিষয় সম্পর্কেই একটা বিশুদ্ধ ধারণা পাবেন এবং বিভ্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

বিজ্ঞানের প্রকৃত উৎস নিয়ে আলোচনা করছি কারণ এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। নাস্তিক ও সংশয়বাদীরা (সবাই না) বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে , তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে অথচ বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলোর উৎসই হল Divine (আসমানী) যা মহান আল্লাহ্‌ আমাদের শিখিয়েছেন।

স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে গিয়ে বিজ্ঞানকে টেনে আনা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

তথ্যসূত্র :-

[১] Chemical Evolution, Oxford,Clarendon Press, 1969, p. 258

[২] http://www.anninevandermeer.nl/html/artikelen/harran_of_the_sabians.htm

[৩] Prophets in the Quran by Ibn Qasir (Rahimahullah)

[৪]The Wisdom of the Egyptians by Brian Brown,Chapter-The Vision of Hermes

[৫] http://alchemylab.com/AJ3-4.htm

[৬]The Archive Of Hor by J.D Ray ,p-65

[৭] নবীদের কাহিনী ,লেখক-আসাদুল্লাহ্‌ আলগালিব, পৃ-৭৫

[৮] আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-ইবনে কাসীর (রহ),পৃ-২২৭

[৯] A meaningful World by Benjamin Wiker


[১০] The Secret Teachings of All Ages by
Manly P. Hall

[১১] http://www.crystalinks.com/hermes_trismegistus.html

 

[১২] The Way of Hermes: New Translations of The Corpus Hermeticum and The Definitions of Hermes Trismegistus to Asclepius by Clement Salaman



[১৩]Physics of the Impossible by Dr. Michio Kaku

[১৪] On the Revolutions of the celestial spheres by Copernicus,p-31
                                                                      
[১৫] The Forbidden Universe: The origins of science and the search for the mind of God by Lynn Picknett

[১৬] Corpus Hermeticum, Treatis XVI ]

[১৭] Newton and Hermetic Tradition by Richard West fall , Page-185-6

[১৮] The Forbidden Universe: The origins of science and the search for the mind of God by Lynn Picknett , Chapter-06

[১৯] Mathematics:The
The Loss of Certainty , p. 31.)







Comments

Popular posts from this blog

ভূমিকম্প ও ধর্মীয় বিশ্বাস

  ভূমিকম্প হওয়ার পর কতিপয় নাস্তিক ভ্রাতা তাদের স্বভাবমত বিশ্বাসীদের ব্যংগ করেছিল এই বলে যে , “ পূর্বে মানুষেরা বজ্রপাত দেখলে ভয় পেত এবং বজ্রপাতের মেকানিজম না জানায় তারা অজানা বিষয়গুলোর মেকানিজমের ক্ষেত্রে স্রষ্টার কথা উল্লেখ করত। ” ভূমিকম্পসহ যেকোন ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনার মেকানিজম সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই হল যে , প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো কিছু Natural Laws মেনে চলে বলে সেগুলো ঘটে। তবে Plausible ধারণা হল এটাই যে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো মূলত দুইভাবে ঘটতে পারে - ১ )Directional Mechanism এর মাধ্যমে ২ ) Automatic Mechanism এর মাধ্যমে Deist রা বিশ্বাস করে যে স্রষ্টা Natural Laws কে তার নিজের মত কাজ করতে দেয় , ন্যাচারাল প্রসেসে Intervene করেন না।অর্থাৎ এরা পুরোপুরি Automatic Mechanism এ বিশ্বাস করে। কিন্তু একজন মুসলিম এইধরনের ধারণায় বিশ্বাস করে না। বরং স্রষ্টা যেকোন সময় সৃষ্টিজগতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এখন এই দুই মেকানিজম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ব্যাখ্যা দেই।এ

বৃত্ত

বৃত্ত (Circle) ও গোলকের (Sphere) মাঝে কিন্তু পার্থক্য আছে। বৃত্ত হল Two dimensional Shape কিন্তু গোলক হল Three dimensional Shape।এই কারণে আমরা কাগজে বৃত্ত আঁকতে পারি কিন্তু গোলক আঁকতে পারি না। Edwin Abbott এর Flatland: A Romance of Many Dimensions নামে একটা বই আছে। বইটার কাহিনী কিছুটা এইরকম--