Skip to main content

অর্গান ট্রেডিং

 অর্গান ট্রেডের বিশাল বড় মার্কেট বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে আছে। সমস্যা হচ্ছে, অর্গান ট্রেডের সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুব বেশি পাওয়া যায় না। 

'Bangladesh’s Body Parts Trade: A Critical Analysis of Gaps in Justice ' নামের একটা পেপারে পড়েছিলাম যে,

 বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলা ছিল কিডনি কেনা-বেচার দালালদের আস্তানা। 

২০১১ সালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে একটা বড় কিডনির দালালগ্রুপকে গ্রেফতার করা হয়। কালাইয়ের যেসব মানুষ কিডনি বিক্রি করত, তারা ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠানদের কাছে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে এই কাজ করত। 

দালালরা এই ধরনের দরিদ্র, গৃহহীন ও ঋণী মানুষদের টার্গেট করত। এই বিষয়ে United Nation Office on Drugs and Crime (UNODC) এর বক্তব্য হচ্ছে--

"পাচারকারীরা ভুক্তভোগীদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে, তাদের একটি কিডনি বিক্রি করাই হচ্ছে দারিদ্র্য মোকাবেলার একমাত্র উপায়।  পাচারকারীরা এই দুর্বলতাগুলির অপব্যবহার করে, বিশেষত বেকার গ্রামীণ কর্মী বা গৃহহীন লোকদের লক্ষ্য করে যারা মরিয়া পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে৷ " (UNODC 2018:30)

কিডনির ব্ল্যাক মার্কেট অনেক লাভজনক। পুরো বিশ্বে ইরান বাদে সব দেশেই কিডনি কেনা-বেচা আইনত দন্ডনীয়। ইরানের লিগাল অর্গান মার্কেটে কিডনির দাম ২৮ থেকে ৪৫ হাজার ডলার। সেই একই কিডনির দাম ব্ল্যাক মার্কেটে ১ লাখ ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। 

কিডনি দানকারীরা সাধারণত ৫ হাজার ডলার পায়,মাঝে মাঝে এরও কম পায়। বাকি ৯০-৯৫% টাকা পায় প্রতারক দালাল ও পাচারকারীরা।কিডনির  এত দামে বিক্রি হওয়ার  কারণ হচ্ছে ট্রান্সপ্লান্ট ট্যুরিজম। 

ট্রান্সপ্লান্ট ট্যুরিজমের ঘটনা প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৯০ সাল The Lancet জার্নালে। সে রিপোর্টে UAE ও Oman এর ১৩০ জন রোগীর কথা উল্লেখ করা হয় যারা ট্রান্সপ্লান্ট করে ইন্ডিয়ার মুম্বাইতে। (A K Salahudeen et al. Lancet. 1990)

এশিয়ার ধনী ব্যক্তিরা ইন্ডিয়া, ফিলিপাইনের মত দেশে এখনো ট্রান্সপ্লান্ট ট্যুরিজমে আসে। অন্যদিকে,আফ্রিকায় ট্রান্সপ্লান্ট ট্যুরিজমে এগিয়ে আছে মিশর।  

২০০৭ সালে WHO একটা রিপোর্টে মিশর,পাকিস্তান,ইন্ডিয়া,ফিলিপাইন এবং চায়নাকে ' Organ exporting Countries' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

কেন অর্গান ট্রেডিং খারাপ? 

প্রথম কথা হচ্ছে,দালালরা জীবন বাঁচাতে মরিয়া দরিদ্রদের ভুল বুঝিয়ে তাদের মূলবান অংগকে নিজেদের আর্থিক স্বার্থে ব্যবহার করে। 

এইসব দালালচক্র যেসব মাধ্যমে কিডনি অপারেশন করে বের করে, সেসব অপারেশনে জটিলতা দেখা দিলে, অংগ দানকারী উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্তার অভাবে মারাও যেতে পারে। 

Sean Columb এর বই Trading Life : Organ Trafficking, illicit networks and exploitation বইতে এক আফ্রিকান কিডনি দানকারী ব্যক্তির কাহিনী পড়েছিলাম, যেখানে তার কিডনির অপারেশন করা হয়েছিল একটা বিল্ডিং এর বেসমেন্টে। 


স্বাভাবিকভাবেই কোন জটিলতা দেখা দিলে, তারা সঠিক চিকিৎসা দিতে পারত না এই অবস্থায়।Lancet এর যে পেপারে যে ১৩০ জন রোগীর কথা  বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই অপারেশন পরবর্তী জটিলতা দেখা গিয়েছিল। ১৩০ জনের মধ্যে ২৫ জন ১ বছরের মধ্যে মারা যায়,কেউ কেউ HIV তে আক্রান্ত হয়।


এই অর্গান ট্রেড কিভাবে  বন্ধ করা যায়? 

এথিকাল অর্গান ডোনেশন প্রাকটিস প্রমোট করতে আমরা ব্যর্থ। এই বিষয়টা প্রমোট করতে পারলে ব্ল্যাক মার্কেটের আধিপত্য কমানো যাবে। 

তাছাড়া দরিদ্র মানুষ যেন প্রতারিত না হয় সেজন্য তাদের সচেতন করা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব।


Comments

Popular posts from this blog

ভূমিকম্প ও ধর্মীয় বিশ্বাস

  ভূমিকম্প হওয়ার পর কতিপয় নাস্তিক ভ্রাতা তাদের স্বভাবমত বিশ্বাসীদের ব্যংগ করেছিল এই বলে যে , “ পূর্বে মানুষেরা বজ্রপাত দেখলে ভয় পেত এবং বজ্রপাতের মেকানিজম না জানায় তারা অজানা বিষয়গুলোর মেকানিজমের ক্ষেত্রে স্রষ্টার কথা উল্লেখ করত। ” ভূমিকম্পসহ যেকোন ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনার মেকানিজম সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই হল যে , প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো কিছু Natural Laws মেনে চলে বলে সেগুলো ঘটে। তবে Plausible ধারণা হল এটাই যে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো মূলত দুইভাবে ঘটতে পারে - ১ )Directional Mechanism এর মাধ্যমে ২ ) Automatic Mechanism এর মাধ্যমে Deist রা বিশ্বাস করে যে স্রষ্টা Natural Laws কে তার নিজের মত কাজ করতে দেয় , ন্যাচারাল প্রসেসে Intervene করেন না।অর্থাৎ এরা পুরোপুরি Automatic Mechanism এ বিশ্বাস করে। কিন্তু একজন মুসলিম এইধরনের ধারণায় বিশ্বাস করে না। বরং স্রষ্টা যেকোন সময় সৃষ্টিজগতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এখন এই দুই মেকানিজম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ব্যাখ্যা দেই।এ

বৃত্ত

বৃত্ত (Circle) ও গোলকের (Sphere) মাঝে কিন্তু পার্থক্য আছে। বৃত্ত হল Two dimensional Shape কিন্তু গোলক হল Three dimensional Shape।এই কারণে আমরা কাগজে বৃত্ত আঁকতে পারি কিন্তু গোলক আঁকতে পারি না। Edwin Abbott এর Flatland: A Romance of Many Dimensions নামে একটা বই আছে। বইটার কাহিনী কিছুটা এইরকম--

The Origin Of Science

১) বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলোর উৎস কি ? সব কিছুরই একটা উৎস আছে । বিজ্ঞানেরও আছে।আপনি যদি ডারউইনিস্টদের মত ভাবেন বিজ্ঞান শুধুমাত্র মানবজাতির জানার আগ্রহ থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের এত উন্নতির পিছনে মূলত দুইটা কারণ আছে।একটা হল মধ্যযুগের মুসলিমদের দ্বারা বিজ্ঞান চর্চা , আরেকটা হল ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লব যা কিনা শুরু হয়েছিল Giordano Brunoর মাধ্যমে এবং শেষ হয়েছিল নিউটনের Principia Mathematica দিয়ে।এরপর মানবজাতিকে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে আর বেশি কষ্ট করতে হয়নি। এখানে অবাক করার বিষয় হল