Skip to main content

The Next Pandemic (Part-II)

১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার এক ঘোড়ার আস্তাবলের একটা ঘোড়া অদ্ভুত এক রোগে আক্রান্ত হয়।সাথে সাথে আরো কিছু ঘোড়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু আতংক ছড়িয়ে পড়ে তখন , যখন সেই আস্তাবলের এক ট্রেইনার একই রোগে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে মারা যায়।[১] 

রোগটা ছড়াচ্ছিল যে ভাইরাসটি দিয়ে সেটার নাম হল 'Hendra'Hendra ভাইরাস তখন কোন বড় ধরনের ক্ষতি করেনি কিন্তু
এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের যে টার্মের কথা মনে করিয়ে দেয় সেটা হল 'Zoonosis' 
সহজ ভাষায় Zoonosis হল এক ধরনের পশুর ইনফেকশন যেটা কিনা মানুষে সংক্রমিত হতে পারে।আর যদি এই ঘটনা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় তাহলে Pandemic হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।এই যুওনোসিস হল ভাইরাসদের জন্য সোনালী সুযোগ।সব ভাইরাস এই সুযোগ পায় না। কিন্তু যারা পায় তারা মানবজাতির জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে ছাড়ে। 

ইবোলা,HIV, Spanish Influenza এগুলো সবই ZoonosisSpanish Influenza ১৯১৮-১৯ সালে যে প্যান্ডেমিক সৃষ্টি করেছিল তাতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। এই ইনফ্লুয়েঞ্জার সোর্স ছিল একটা ওয়াইল্ড একুয়াটিক পাখি। 
HIV
মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে মূলত আফ্রিকান শিকারীদের কারণে। শিকারীরা শিম্পাঞ্জি শিকার করে যখন মাংস কাটত কিংবা যখন মাংস খেত তখন হয়তো এই ভাইরাস (SIV হিসেবে) প্রবেশ করেছিল।[২] ইবোলা ভাইরাসও একইভাবেই প্রবেশ করেছে মানুষের শরীরে। 

প্রশ্ন হল ,ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে কি এমন করে যাতে একজন সুস্থ ,সবল মানুষের অল্পদিনের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে? 
ভাইরাস খুব সহজভাবেই কাজটা করে। এদের কাজটা Lock and key সিস্টেমে হয়।ভাইরাসে প্রোটিন আবরণে থাকে মলিকিউলার Key আর আমাদের কোষঝিল্লিতে থাকে মলিকিউলার Lock (Receptor)যখন ভাইরাস দ্বারা কেউ ইনফেক্টেড হয় তখন সেই ভাইরাস ইনফেক্টেড ব্যক্তির কোষের ভিতর ঢুকে যায় ভাইরাল চাবি দিয়ে। এরপর কোষের অঙ্গানুগুলোকে নিজের দখলে নিয়ে নতুন ভাইরাসের সৃষ্টি করে। Zoonotic ভাইরাসের বেলায় এই প্রক্রিয়াটা নতুন জাতের ভাইরাস সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভাইরাসের একটা বৈশিষ্ট্য হল যে এদের মিউটেশন খুব দ্রুত হয় কারণ এরা একটা কোষ থেকে ব্যাপক পরিমাণ নতুন ভাইরাসের সৃষ্টি করতে পারে।কিন্তু যুওনোটিক ভাইরাস নতুন জাত সৃষ্টি করতে পারে সহজে আর এতে করে যদি প্যাথোজেনিক জাতের সৃষ্টি হয় তাহলে তা প্যান্ডেমিকের সৃষ্টি করতে পারে। 
যেমন- HIV প্রথমে Nonpathogenic ভাইরাস ছিল যার নাম দেওয়া হয়েছে SIVমিউটেশনের ফলে এটার প্যাথোজেনিক রূপ সৃষ্টি হয়েছে যা কিনা AIDS প্যান্ডেমিকের সৃষ্টি করেছে। 

যুওনোটিক ভাইরাস প্যাথোজেনিক জাত সহজে সৃষ্টি করতে পারে কারণ এর পোষক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন ধরুন , একটা ফার্মে একধরনের পাখি ,শুকূর এবং মানুষের মাঝে ইন্টারেকশন হয়। এখন মনে করুন এই তিন ধরনের প্রাণী তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত ।ধরলাম, ভাইরাসগুলো হল H1N1, H2N2,H2N3বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলোতে মোট ১৬ ধরনের H (Haemaglutinin) জিন ও ৮ ধরনের N (Neuraminidase) জিন পাওয়া গিয়েছে। 

এখন ধরুন মানুষের ফ্লু শুকূরের একটা কোষকে ইনফেক্ট করল যেখানে অলরেডি অন্য ফ্লু ভাইরাসের জিন উপস্থিত আছে। তখন যে ঘটনাটা হতে পারে সেটা হল Gene Swapping অথবা একে ভাইরাল সেক্সও বলা যায়। এই Swapping এর পর যে ভাইরাসগুলোর জন্ম হবে সেগুলো হয়তো নন-প্যাথোজেনিক হবে নাহলে প্যাথোজেনিক হবে অথবা নতুন ভাইরাস্গুলো র‍্যাপিড মিউটেশনের কারণে প্যারালাইজডও হয়ে যেতে পারে। একই ঘটনা মানুষের ফ্লু ও পাখির ফ্লুর সাথেও হতে পারে।এমনকি বহু সংখ্যক ভাইরাসের মধ্যেও জিনের বিনিময় ঘটতে পারে। 

২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু (H1N1) প্যান্ডেমিক সৃষ্টি করতে ভূমিকা পালন করেছিল শুকূর। সোয়াইন ফ্লুর ছয়টা জিন এসেছিল নর্থ আমেরিকান ফ্লু ভাইরাস থেকে আর দুইটা জিন এসেছিল ইউরেশিয়ান পিগ ফ্লু ভাইরাস থেকে।[৩] 

আসলে শুকূর বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের জন্য একটা উৎকৃষ্ট পোষক ও উত্তম বিছানা Viral সেক্সের জন্য। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা শুকূরের মধ্যে তিন ধরনের ফ্লু ভাইরাসের "Triple Reassortment" আবিষ্কার করেছিলেন।[৩] কিন্তু দুঃখের বিষয় হল শুকূর খাদকদের কারণে শুকূরের ফার্মের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। আর এতে করে ভবিষতে হয়তো আরো ভয়াবহ ফ্লু প্যান্ডেমিক দেখতে হতে পারে। 

শুকূরপ্রেমী জাতিদের বুঝা উচিত যে শুকূর শুধু ফ্লু ভাইরাসদের লালন-পালন করে না অন্য ধরনের প্যাথোজেনিক ভাইরাসও এরা ধারণ করে।১৯৯৭ সালে মালেশিয়ার শুকূরের ফার্মের ফার্মাররা নিপাহ ভাইরাস দিয়ে ইনফেক্টেড হয় এবং এই ভাইরাস দ্বারা ইনফেক্টেড ২৬৫ জনের মধ্যে ১০৫ জন মারা যায়। 

এই নিপাহ ভাইরাসের ধারক পোষক হল বাঁদুর। পিগ ফার্মের গাছগুলোতে বাঁদুরগুলো আশ্রয় নেয় এবং বাঁদুরদের বর্জ্য পদার্থ দ্বারা ফার্মের শুকূরগুলো ইনফেক্টেড হয় এবং তা পরবর্তীতে মানুষের মাঝে ছড়ায়। অসাধারণ এক ভাইরাল জাম্প! চিন্তা করুন একবার যদি নিপাহ ও ফ্লু ভাইরাস দ্বারা শুকূরের দেহে নতুন কোন প্যাথোজেনিক মিউট্যান্ট ভাইরাসের সৃষ্টি হয় তাহলে কতটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। 

অবশ্য ১৯৯৯সালে প্রায় ১০ লাখ শুকূর জবাই করার পর রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল।[৪] 

বুঝাই যাচ্ছে, ঈসা ( আ) যখন পৃথিবীতে আবার আসবেন তখন অবশ্যই অকারণে শুকূরদের হত্যা করবেন না।[৫] :) 

তথ্যসূত্রঃ 
[
১] Spillover by David Quammen
[
২]The Viral Storm by Nathan Wolfe 

[
৩]A Planet Of Viruses by Carl Zimmer 
[
৪]Viruses: A Very Short Introduction by Dorothy Crawford, 
[
৫]Bukhari

Comments

Popular posts from this blog

ভূমিকম্প ও ধর্মীয় বিশ্বাস

  ভূমিকম্প হওয়ার পর কতিপয় নাস্তিক ভ্রাতা তাদের স্বভাবমত বিশ্বাসীদের ব্যংগ করেছিল এই বলে যে , “ পূর্বে মানুষেরা বজ্রপাত দেখলে ভয় পেত এবং বজ্রপাতের মেকানিজম না জানায় তারা অজানা বিষয়গুলোর মেকানিজমের ক্ষেত্রে স্রষ্টার কথা উল্লেখ করত। ” ভূমিকম্পসহ যেকোন ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনার মেকানিজম সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই হল যে , প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো কিছু Natural Laws মেনে চলে বলে সেগুলো ঘটে। তবে Plausible ধারণা হল এটাই যে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো মূলত দুইভাবে ঘটতে পারে - ১ )Directional Mechanism এর মাধ্যমে ২ ) Automatic Mechanism এর মাধ্যমে Deist রা বিশ্বাস করে যে স্রষ্টা Natural Laws কে তার নিজের মত কাজ করতে দেয় , ন্যাচারাল প্রসেসে Intervene করেন না।অর্থাৎ এরা পুরোপুরি Automatic Mechanism এ বিশ্বাস করে। কিন্তু একজন মুসলিম এইধরনের ধারণায় বিশ্বাস করে না। বরং স্রষ্টা যেকোন সময় সৃষ্টিজগতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এখন এই দুই মেকানিজম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ব্যাখ্যা দেই।এ

The Origin Of Science

১) বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলোর উৎস কি ? সব কিছুরই একটা উৎস আছে । বিজ্ঞানেরও আছে।আপনি যদি ডারউইনিস্টদের মত ভাবেন বিজ্ঞান শুধুমাত্র মানবজাতির জানার আগ্রহ থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের এত উন্নতির পিছনে মূলত দুইটা কারণ আছে।একটা হল মধ্যযুগের মুসলিমদের দ্বারা বিজ্ঞান চর্চা , আরেকটা হল ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লব যা কিনা শুরু হয়েছিল Giordano Brunoর মাধ্যমে এবং শেষ হয়েছিল নিউটনের Principia Mathematica দিয়ে।এরপর মানবজাতিকে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে আর বেশি কষ্ট করতে হয়নি। এখানে অবাক করার বিষয় হল

বৃত্ত

বৃত্ত (Circle) ও গোলকের (Sphere) মাঝে কিন্তু পার্থক্য আছে। বৃত্ত হল Two dimensional Shape কিন্তু গোলক হল Three dimensional Shape।এই কারণে আমরা কাগজে বৃত্ত আঁকতে পারি কিন্তু গোলক আঁকতে পারি না। Edwin Abbott এর Flatland: A Romance of Many Dimensions নামে একটা বই আছে। বইটার কাহিনী কিছুটা এইরকম--