৫৪২,১৩৩৪-১৩৪৭,১৫৬৩,১৬৬৫,১৭২৯-৩০,১৮২৯-৫১........১৯১৮.......২০০৯।
এইগুলো কোন সাধারণ সংখ্যা নয়। এই সংখ্যাগুলো সেই ভয়াবহ মহামারীগুলোর সময়কে নির্দেশ
করছে যখন কিনা মানবজাতি Microbeদের
শক্তি দেখেছিল।এটাকে Pandemics
এর Timelineও
বলতে পারেন।
কোন রোগের প্রাদুর্ভাবকে তিনটা টার্ম দিয়ে প্রকাশ করা যায় প্রাদুর্ভাবের অবস্থানুযায়ী।এই টার্মগুলো হল
Pandemic, Epidemic এবং
Endemic।টার্ম তিনটির পার্থক্য জানা
উচিত।কোন রোগের প্রাদুর্ভাবকে তিনটা টার্ম দিয়ে প্রকাশ করা যায় প্রাদুর্ভাবের অবস্থানুযায়ী।এই টার্মগুলো হল
সাধারণভাবে বলতে গেলে যদি কোন রোগ পুরো দেশ বা মহাদেশ বা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন সেটা হয় Pandemic। অপরদিকে কোন লোকাল এরিয়াতে অস্থায়ীভাবে কোন রোগ ছড়ালে এবং স্বাভাবিকের থেকে বেশি মানুষ ইনফেক্টেড হলে সেটাকে Epidemic বলা হয়।কিন্তু রোগটা যদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেটা হবে Endemic।যেমন-Malaria।
সহজ ভাষায়, Pandemic হল বড় ভাই, Epidemic মেঝো ভাই আর Endemic ছোট ভাই।তাই বুঝতেই পারছেন শুরুটা আসলে Endemic থেকে হয়।Pathogenic Microbe যদি সফল Mutation লাভ করতে পারে তাহলে সে মাইক্রোভ দ্বারা সৃষ্ট রোগ Endemic থেকে নেক্সট স্টেজে যেতে পারে।যেমনটা হয়েছে AIDS এর ক্ষেত্রে। AIDS আফ্রিকাতে প্রথমে Endemic Steady Stage এ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে সেটা Epidemic স্টেজে যায় আর বতর্মানে Pandemic স্টেজে আছে এটা।আর বর্তমানের ইবোলা আছে Epidemic স্টেজে কিন্তু ইবোলা ভাইরাস Pandemic Potiential না। অর্থাৎ এই ভাইরাসের Pandemic স্টেজে যাবার ক্ষমতা নেই কিংবা কম।
Pandemic যেকোন ধরনের মাইক্রোভ দিয়ে হতে পারে।তবে আমি প্রধানত ভাইরাস নিয়ে আলোচনা করব সাথে ব্যাকটেরিয়া এবং ম্যালেরিয়া পরজীবীর বিষয়টাও আসতে পারে।
VIRUS:-
বেশীরভাগ মানুষ ভাইরাস শব্দের অর্থ বিষ (Venom of a Snake) বলে জানে।কিন্তু রোমান এম্পায়ার থেকে পাওয়া ভাইরাস শব্দের দুইটা অর্থ আছে।বিষ ছাড়াও ভাইরাসের আরেকটা অর্থ হল 'Semen of a man' ।এক হিসেবে অর্থ দুইটি পরস্পর বিরোধী।বায়োলজিস্ট Carl Zimmer এর মতে--
" Creation and Destruction in one word." [১]
বাস্তবতাও তাই বলে। ভাইরাসকে আমরা ভিলেন হিসেবেই চিনি কারণ ভাইরাসের আবিষ্কারই হয়েছিল একটা রোগের কারণ খুঁজতে গিয়ে।
ডাচ মাইক্রোবায়োলজিস্ট Martinus Beijerinck প্রথম 'ভাইরাস' শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
Beijerinck এর পিতা ছিলেন তামাক ব্যবসায়ী কিন্তু TMV ভাইরাসের কারণে তার ব্যবসার খুব ক্ষতি হয়েছিল।আর এই কারণেই হয়তো তামাকের মোজাইক রোগের কারণ খুঁজতে Beijerinck উঠে-পড়ে লেগেছিলেন।[২] এই রোগ নিয়ে এডলফ মায়ার ও আইভানোভস্কি এক্সপেরিমেন্ট করলেও তাদের এক্সপেরিমেন্টের কনকুলেশনটা ভুল ছিল।তারা মনে করেছিলেন ব্যাকটেরিয়া থেকে নিঃসৃত কোন বিষের কারণে রোগটা হয়।
ভাইরাস আবিষ্কারের পর দীর্ঘসময় ধরে শুধুমাত্র রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভাইরাসের ভূমিকা জানার জন্য গবেষণা করা হয়। কিন্তু ভাইরাসের সাথে জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্পষ্ট হওয়া শুরু হলে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হতে থাকে এবং এখনো অনেক কিছুই স্পষ্ট হবার বাকি আছে।
VIRUS AND CREATION :-
মানুষ তার বর্তমান অবস্থায় Evolution এর কারণেই এসেছে। কিন্তু এই Evolution নাস্তিকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হয় নি। এই লেখায় এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারছি না।কারণ এখানে শুধু মানুষের বিবর্তনের ক্ষেত্রে ভাইরাসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথমেই Evolution এর সঠিক সংজ্ঞাটা জানা প্রয়োজন।আমার কাছে যেটা ভাল লেগেছে তা হল--
" Evolution is a process that results in heritable changes in a population spread over many generations " [3]এই Heritable Change বা Mutation ঘটাতে সাহায্য করতে পারে একধরনের Retrovirus।মানুষের ক্ষেত্রে যে ভাইরাসটা এই ভূমিকা পালন করে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সেটা হল HERVs (Human Endogenous Retroviruses) ।
Retrovirus হল RNA ভাইরাস। পোষক কোষকে ইনফেক্ট করার পর এই ভাইরাস তার RNA কে
রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইমের মাধ্যমে DNA তে পরিণত করে।এরপর সেই ভাইরাল DNA ভাইরাসের Integrase নামক এনজাইমের সাথে পোষক কোষের DNA এর সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। এই ভাইরাল DNA সিকুয়েন্সকে বলা হয় Provirus। পরবর্তীতে ইনফেক্টেড কোষের বিভাজন হলে কোষের অরিজিনাল DNA এর সিকুয়েন্স কপি হয় না কপি হয় নতুন DNA এর সিকুয়েন্সের যেটাতে কিনা ভাইরাসের DNA যুক্ত হয়েছে।[৪]
ঘটনাটা অসাধারণ হয় তখন, যখন কিনা Retrovirus শুক্রাণু বা ডিম্বাণুকে ইনফেক্ট করে।যখন শুক্রাণু ইনফেক্টেড হয় তখন প্রচুর শুক্রাণুর মধ্যে শুধুমাত্র ইনফেক্টেড শুক্রাণুটা ইউনিক টাইপের হয় কারণ এতে ভাইরাল DNA যুক্ত থাকে। যদি সেই ইউনিক শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হতে পারে তাহলে পৃথিবীতে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের আগমন ঘটতে পারে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও শর্ত ঠিক থাকলে।[৫]
তবে এই বিষয়টা খুবই রেয়ার কারণ বিপুল সংখ্যক শুক্রাণুর মধ্যে অল্প কিছু ইনফেক্টেড হলে ইনফেক্টেড শুক্রাণুগুলোর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।কিন্তু ডিম্বাণু ইনফেক্টেড হলে সফলতার হার বেশি হয়।
এই Endogenous Retrovirusগুলোর সফলতার প্রমাণ তখন পাওয়া যায় যখন দেখা যায় যে আমাদের (বর্তমান) DNA এর ৮ পার্সেন্ট তৈরীতে এই ভাইরাসগুলো ভূমিকা রেখেছিল এবং ভবিষতেও রাখবে।[৬]
আদম (আঃ) এর সময় মানুষের আকার-আকৃতি ,গায়ের রং, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা,ব্লাড প্রেসার,হরমোন,এনজাইম ইত্যাদি বর্তমানের মত ছিল না। পৃথিবীর আকৃতি,গ্রাভিটি,মিউটেশন,রোগ-ব্যাধি,পুষ্টি,জলবায়ু ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলোর কারণে আমরা অরিজিনাল অবস্থা (Pure State) থেকে বর্তমান অবস্থায় এসেছি। আমাদের ৮ পার্সেন্ট ভাইরাল DNA ও এতে ভূমিকা রেখেছে।
Endogenous Retrovirus আরো একটি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হল গর্ভধারণের সময় ফিটাস ও প্লাসেন্টার একত্রিকরণ বা Fusion।
Heidmann এবং অন্যান্য রিসার্চারদের গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে এই ভাইরাসের একটি জিন এই ফিউশনে ভূমিকা পালন করে।[৭] প্লাসেন্টা আর ফিটাসের এই ফিউশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ফিউশন না হলে ফিটাস পুষ্টি না পেয়ে মারা যেত।
Endogenous Retrovirus এর এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখে Carl Zimmer ঠিকই বলেছেন--
"In our most intimate moment, as new human life emerges from old, viruses are essential to our survival." [A planet of viruses by Carl Zimmer]
ভাইরাস আমাদের সারভাইভেলে অবশ্যই ভূমিকা পালন করে।মহান আল্লাহ্ তাআলা এই মাইক্রোভদের কিছু শ্রেণীকে এইভাবেই সৃষ্টি করেছেন।কিন্তু সবাই তো আর এই ভূমিকা পালন করে না।জীবন বিধ্বংসী ভাইরাসেরও অভাব নেই।
Creation এ যেমন ভাইরাস ভূমিকা পালন করতে সক্ষম তেমনি বড়ধরনের Destruction করতেও সক্ষম এরা ।আগামী পর্বে ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক ভূমিকা নিয়েই আলোচনা করব , ইনশা'আল্লাহ্।
তথ্যসূত্র:-
[১]A Planet of Viruses by Carl Zimmer ,Chapter-Introduction
[২]The Viral Storm by Nathan Wolfe, Chapter-The Viral Planet
[৩]http://www .talkorigins.org/faqs/evolution-definition.html
[৪]Viruses: A Very Short Introduction by Dorothy Crawford, Chapter-What are Viruses?
[৫]The Virus Hunters (Documentry)
[৬]A Planet of Viruses by Carl Zimmer, Chapter-Our Inner Parasites
Comments
Post a Comment