১)
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জার্মান ফিলোসফার Friedrich Nietzsche এই মহাবিশ্বকে অর্থহীন বলে দাবি করেছিল। Nietzsche এর মতে সবরকম ফিলোসফি, সকল ধর্ম, বিজ্ঞান , সাহিত্য , শিল্প অর্থহীন মহাজাগতিক ক্যানভাসে (Cosmic Canvas) 'অর্থ'কে আঁকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।[১]
Nietzsche এর মত যারা বিশ্বাস করে এই মহাবিশ্ব অর্থহীন , উদ্দেশ্যহীন ,যারা বলে বেড়ায়
"We're atoms in the void, get it?" তারা Nihilist নামে পরিচিত।Nihilistরা যে ফিলোসফিকে ফলো করে সেটার নাম হল Nihilism।
"We're atoms in the void, get it?" তারা Nihilist নামে পরিচিত।Nihilistরা যে ফিলোসফিকে ফলো করে সেটার নাম হল Nihilism।
ল্যাটিন শব্দ Nihil এর অর্থ হল Nothing। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ায় Alexander II এর শাসনামলে Nihilism এর জন্ম হয়েছিল। [২]আসলে Nihilism এর জন্ম আরো আগেই গ্রীসে হয়েছিল নাস্তিক দার্শনিক Epicurus এর দ্বারা। Epicureanism এর মতে এই মহাবিশ্ব হল Meaningless, Godless
, Purposeless।[৩] আর এই Epicureanism উত্তরাধিকার হল Nihilism।এই কারণে Nihilism এর সাথে অনীশ্বরবাদ ,বস্তুবাদ ,উপযোগবাদের গভীর সম্পর্ক দেখা যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে Nihilism এর প্রচার হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এর প্রচার বহুল মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে।
লেখিকা Karen L. Carr এর ভাষায়-
"উনবিংশ শতাব্দীর অভিশাপ নিহিলিজম, বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে দ্রুত গতানুগতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।"[৪]
মুভি,নাটক, সাহিত্য ইত্যাদি পপুলার কালচার দ্বারা নিহিলিজমের প্রসার আরো বেড়েছে। Woody
Allen এর মুভি, Seinfield এর মত টিভি শো এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।[৫]
বাস্তবতা হল এই যে, Nihilism এমন এক বিষের নাম যা কিনা বর্তমানে ডাইরেক্টলি কিংবা ইনডাইরেক্টলি অনেকে ফলো করছে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে Nihilist হচ্ছে আবার কেউ Nihilistদের মত জীবন-যাপন করছে শুধুমাত্র জুমু'আর স্বলাত ও রমাদ্বানে ইসলাম পালন করার মাধ্যমে।
এখন Meaningful আর Meaningless এর ডেফিনেশন নিয়ে একটু আলোচনা করি। আমি এখানে খুবই সরল ডেফিনেশন দিব। খুব জটিল ধরনের ডেফিনেশনটা আলোচনা করছি না।লেখাটা পড়েই বুঝতে পারছেন যে লেখাটার একটা Meaning
আছে এবং একটা Purposeও আছে।কিন্তু লেখাটা Meaningful হল কি করে? এর উত্তর হল আমি বাক্যের মধ্যে শব্দগুলোকে সঠিকভাবে সাজিয়ে লিখেছি অর্থাৎ বাক্যের Proximity (আসত্তি) ঠিক আছে । কিন্তু এই পোস্টের প্রথম বাক্য যদি আমি এভাবে লিখতাম যে " দিকে ঊনবিশং শেষ জার্মান...।" তাহলে বাক্যটা অর্থহীন হত।
আবার আমি যদি এখানে লিখতাম " হাতিরা আকাশে উড়ে" তাহলে বাক্যটা অর্থহীন হত বাক্যের যোগ্যতা গুণের অভাব । লক্ষ্য করুন "হাতিরা আকাশে উড়ে" বাক্যটার প্রতিটা শব্দের বিশুদ্ধ অর্থ আছে কিন্তু শব্দগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় বাক্যটা অর্থহীন হয়েছে। তেমনি অর্থপূর্ণ শব্দগুলোকে যদি সঠিকভাবে সাজানো না হয় তাহলেও বাক্যটা অর্থহীন বলেই গণ্য হবে।এখানে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যে কোন বিষয়ের Meaning না থাকলেও এর Purpose থাকতে পারে। যেমন ধরুন- " হাতিরা আকাশে উড়ে " বাক্যটা অর্থহীন হলেও এই বাক্যটার একটা উদ্দেশ্য আছে কারণ এই বাক্যটাকে আমি পাঠকদেরকে Meaning এর ডেফিনেশন বুঝাতে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এই কথাগুলো যেমন ব্যাকরণের জন্য প্রযোজ্য তেমনি বিজ্ঞানের ভাষা অর্থাৎ গণিতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গণিত কিন্তু নির্দিষ্ট ধাপে ধাপে এগোয়। গণিতের কোন একটা ধাপে যদি সামান্য +/- চিহ্নও ভুল লেখা হয় তাহলে ফলাফল পুরো অন্যরকম আসে। অদ্ভুত ব্যাপার হল এই মহাবিশ্ব যদি Meaningless ই হয় তাহলে গণিতের প্রতিটা ধাপ একইসাথে Meaningful এবং Accurate হওয়ার আবশ্যকতার মানে কি? এর মানে হল মহাবিশ্ব মোটেই অর্থহীন নয়।বরং মহাবিশ্বের একটা গভীর অর্থ ও উদ্দেশ্য উভয়ই আছে।
কারণ মহাবিশ্ব যদি Balanced না হত ,Physical Constantগুলোর যদি Constancy না থাকত তাহলে Mathematical
Equation দিয়ে এই মহাবিশ্বের প্রকৃতিকে প্রকাশ করা সম্ভব হত না।মহাবিশ্ব Meaningful না হলে গণিতের সমীকরণগুলোতে সংঘর্ষ দেখা দিত , এক সমীকরণ দ্বারা অন্য সমীকরণকে প্রমাণ করা যেত না। বিজ্ঞানের ভাষা হত বিক্ষিপ্ত। কিন্তু গণিত মোটেই এইরকম না বরং গণিত খুবই Stable।
Nihilistরা দাবি করে যে তারা Scientific
Rationalism ফলো করে।অথচ কোনরকম গভীর পর্যবেক্ষণের আগেই কোন বিষয়কে অর্থহীন দাবি করার প্রবণতা তাদের মাঝে দেখা যায়। আপনি একটা বিষয়ে অজ্ঞ তাই বলে আপনি দাবি করতে পারেন না যে বিষয়টা অর্থহীন। উদাহরণ হিসেবে ধরুন- 'aafajfdjaiwrjfsfj' এই লেখাটার কি কোন অর্থ আছে? বুঝাই যাচ্ছে এটা আমি নিজেই এলোমেলোভাবে টাইপ করে লিখেছি।তার মানে এর কোন অর্থ নেই। কিন্তু যদি এটা কাগজে সুন্দর করে লেখা চিঠিতে দেখা যেত তাহলে অবশ্যই লেখাটাকে দ্রুত অর্থহীন বলা যেত না। কারণ লেখাটা তো একটা সাংকেতিক ভাষাতেও লেখা হতে পারে ।লেখাটা সাংকেতিক হতে পারে- এই চিন্তাটা আসছে কারণ এটা চিঠিতে লেখা।অর্থাৎ কোন বিষয়ের অর্থ থাকা না থাকাটা বিষয়ের Context এর উপরও নির্ভর করে।তাই আপাতদৃষ্টিতে কোন কিছুকে অর্থহীন মনে হলেও সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ ও Context বুঝার মাধ্যমে সেটার অর্থ জানা সম্ভব।
নিহিলিস্ট ও নাস্তিকরা কসমোলজির বেশ কিছু বিষয়কে মহাবিশ্বের অর্থহীন হবার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে। আমি এখানে শুধু কসমোলজির একটা বিষয়কে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করব যা কিনা পূর্বে অর্থহীন বলে দাবি করা সম্ভব হলেও নতুন তথ্য জানার পর তা বর্তমানে অসম্ভব হয়ে গিয়েছে।
২)
আল্লাহ্ তা'আলা মহাবিশ্বকে এমন কিছু শর্তের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যার ফলে মানুষ অস্তিত্ব লাভ করতে পেরেছে। এই শর্তগুলো ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। যেহেতু আমাদের জানা মতে এই মহাবিশ্বে কার্বন-বেসড বুদ্ধিমান প্রাণী শুধু আমরাই সেহেতু এইসব শর্তকে Anthropic Conditions (Greek,
Anthropos=HumanBeing) বলা হয়।এই কন্ডিশনগুলো হল ফিজিক্যাল , বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল। কসমোলজির ভাষায় এই কন্ডিশনগুলোর আলোচনাকে Anthropic Principle বলা হয়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রচুর Anthropic Condition আবিষ্কার হতে থাকে ফলে Anthropism এর অবস্থানও দৃঢ় হতে থাকে ধীরে ধীরে। এর পূর্বে অষ্টাদশ ও ঊনবিশং শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা মূলত Disanthropism এ বিশ্বাস করত আর এই Disanthropism এর ভুল ব্যাখ্যাকেই গ্রহণ করার ফলে Nihilism এর জন্ম হয়। মূলত অষ্টাদশ ও ঊনবিশং শতাব্দীর Disanthropism ছিল নাস্তিক এপিকিউরাসের বস্তুবাদী কসমোলজি।[৬]
এপিকিউরাসের বস্তুবাদী কসমোলজি অনুযায়ী মহাবিশ্ব হল চিরন্তন,মহাবিশ্বের কোন শুরু বা শেষ নেই, মহাবিশ্বে মানুষের অবস্থান গুরত্বহীন,অসীম সংখ্যক দুর্ঘটনার ফলে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে,মহাবিশ্বে মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রাণী যেমন প্রচুর আছে তেমনি নির্বোধ প্রাণীও প্রচুর আছে।ঊনবিংশ শতাব্দীর Nihilist/ নাস্তিকদের আক্বীদা ছিল এটা।
'মহাবিশ্ব চিরন্তন' এই কথা বলে তৎকালীন Nihilistরা একটু চালাকি করতে চেয়েছিল।এপিকিউরাসের মতানুযায়ী মহাবিশ্ব যদি সৃষ্টিই না হয়ে থাকে তাহলে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নই আসে না!
কিন্তু যখন বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করলেন যে মহাবিশ্বের শুরু আছে তখন Nihilistরা নিজেদের বিশ্বাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হল ।মহাবিশ্বের শুরু থাকায় জন্ম হল কিছু জটিল প্রশ্নের যেমন-
"মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে কি ছিল?" "এত Precisely মহাবিস্ফোরণ দ্বারা কিভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হল?" । এই প্রশ্নগুলোর যথার্থ উত্তর দিতে Nihilistরা ব্যর্থ হল ,ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য এরা বিভিন্ন হাইপোথিসিসকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করল (যেমন-Multiverse Theory) । পরবর্তীতে Nihilistদের মাথায় একের পর এক বাজ পড়তে থাকল যখন Anthropic Conditionগুলো আবিষ্কার হওয়া শুরু করল।
আমি এখানে কসমোলজির Anthropic Conditionগুলো নিয়ে আলোচনা করব।এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে মানুষের থেকে শ্রেষ্ঠ কোন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যদি মহাবিশ্বে থাকে তবে Anthropism এর মৃত্যু হবে কিন্তু মানুষই যদি অন্য কোন গ্রহে থাকে তাহলে আর Anthropic Principle ভায়োলেট হবে না বরং মডিফিকেশন হবে। তাছাড়া Anthropic Principle ভায়োলেট হলেও আস্তিকতার জন্য সেটা হুমকি হবে না।
আমাদের সৌরজগৎ
:-
রাতের বেলা পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকালে প্রচুর নক্ষত্র দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল 'এত এত নক্ষত্রের প্রয়োজন কি ছিল ?' অবজারভেশন থেকে সৃষ্ট হাইপোথিসিস অনুযায়ী নক্ষত্রগুলোতে প্রাণের খোঁজ পাওয়াও মুশকিল । এই নক্ষত্রগুলো যদি প্রাণ ধারণ করতে অক্ষমই হয় তাহলে আল্লাহ্ তাআলা শুধু শুধু নক্ষত্রগুলো এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে কেন সৃষ্টি করলেন?এটা কি Meaningless না?
আপনি কোন শহরে গিয়ে যদি দেখেন শত শত বাড়ির মধ্যে শুধু একটা বাড়ি কিংবা আরো কিছু বাড়ি বসবাস করার যোগ্য বাকিগুলো বসবাস করার অযোগ্য আর তাই সেই বাড়িগুলো খালি পড়ে আছে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি ইঞ্জিনিয়ার কিংবা শহরের ডিজাইনারকে দোষ দিবেন এবং বলবেন যে এই খালি বাড়িগুলো সৃষ্টি করে অপচয় করার তো কোন মানে হয় না।
আপাত দৃষ্টিতে শহরের ক্ষেত্রে এই রিজনিং লজিক্যাল মনে হলেও মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে এটা খাটে না। মানুষের ভুল হতে পারে কিন্তু স্রষ্টা ভুল করেন না। মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে কোন সায়েন্টিফিক রিজনিং , অবজারভেশন ছাড়া অর্থহীন বলাটা বোকামি । Nihilistরা এই কাজ প্রায়ই করে থাকে।
সায়েন্টিফিক রিজনিং মহাবিশ্বের এই নক্ষত্রগুলো সম্পর্কে কি বলে সেটা জানার আগে Zoom In করে সৌরজগৎ এর দিকে তাকাই। অন্যান্য নক্ষত্রের কথা বাদ দিলাম কিন্তু আমাদের সৌরজগৎ এ প্রাণ ধারণে অক্ষম ৭টা গ্রহ থাকার মানে কি? একটা সূর্য আর আমাদের পৃথিবী থাকলেই তো হত।আর একটা নক্ষত্র অন্তত একটা গ্রহ নিয়ে থাকতে পারে।[৭]
যদি আমাদের সৌরজগৎ এর কোন একটা গ্রহকে সরিয়ে দেয়া হয় তাহলে Mathematical Reasoning অনুযায়ী পুরো সোলার সিস্টেম Vulnerable হয়ে যাবে।পৃথিবীর কক্ষপথের আকার আরো উপবৃত্তাকার ধারণ করবে , আর পৃথিবীর প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তন হলে পৃথিবী আবহাওয়া অনেক খারাপ হয়ে যাবে।
এককথায় পুরো সোলার সিস্টেমই ভারসাম্যহীন হয়ে যাবে ধীরে ধীরে।
সোলার সিস্টেমে পৃথিবী যদি একা থাকত তাহলে ধুমকেতুর আঘাতে আমাদের পৃথিবী ঝাঝরা হয়ে যেত।প্রায়ই পৃথিবীতে ধুমকেতু আঘাত হানত। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সৌরজগৎকে ডিফেন্স সিস্টেমসহ সৃষ্টি করেছেন যাতে করে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে আমরা নিদির্ষ্ট সময় পর্যন্ত নিরাপদ থাকি।সৌরজগতের এই ডিফেন্স সিস্টেম তৈরী করেছে বাকিগ্রহগুলো।
১৯৯৪ সালে George Wetherill প্রমাণ করেন যে জুপিটার আমাদের পৃথিবীকে ধুমকেতুর আঘাত থেকে রক্ষা করে চলছে। জুপিটারের গ্রাভিটিশনাল ফোর্স খুব শক্তিশালী কারণ জুপিটার বিশাল বড় এক গ্রহ , এতটাই বিশাল যে জুপিটারের ভিতরে ১,৩২১টা পৃথিবীকে রাখা সম্ভব।জুপিটার তার শক্তিশালী গ্রাভিটি দ্বারা ধুমকেতু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কিংবা নিজে গ্রহণ করে নেয়। [৮]
এছাড়া মার্স ও জুপিটার, এদের মাঝে থাকা Asteroid Belt এর Asteroidগুলো থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করছে, ভেনাসও কাজ করে যাচ্ছে এদের সাথে । বলা যায় গ্রহগুলো মিলে একধরনের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরী করেছে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য।[৯]
সৌরজগতের গ্রহগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা কিনা Einstein's
Universe সম্পর্কে আলোচনা করলে বুঝতে পারবেন।তবে এখানে যতটুকু আলোচনা করেছি ততটুকু যে বুঝেছে সে কখনো সৌরজগতে ১টার বেশি গ্রহ থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না।
Einstein's
Universe :-
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল যে বেশিরভাগ বিজ্ঞানের ছাত্র আইন্সটাইনের General theory of relativity সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানে না কারণ কলেজ লেভেলে এটা পড়ানো হয় না।অথচ মর্ডান ফিজিক্সের দুইটা ফাউন্ডেশনাল পিলারের মধ্যে একটা পিলার হল এই জেনেরাল রিলেটিভিটি আরেকটা পিলার হল Quantum Mechanics।[১০]
আইন্সটাইনের জেনেরাল রিলেটিভিটি আমাদের একটা থিওরিটিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছে যার দ্বারা আমরা মহাবিশ্বকে বুঝতে চেষ্টা করতে পারি। মহাবিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি রকম হতে পারে সে বিষয়টাও আমরা হাইপোথিটাক্যালিজানতে পারি এই থিওরির দ্বারা।
আইন্সটাইন ১৯০৫ সালে তার Special Relativity প্রকাশ করেছিল কিন্তু সে বুঝতে পেরেছিল যে তার এই থিওরিটা অসম্পূর্ণ কারণ স্পেশাল রিলেটিভিটি নিউটনের Universal Law of Gravityর সাথে সাংঘর্ষিক ছিল । নিউটনের থিওরিও অসম্পূর্ণ ছিল এটা আইন্সটাইন জানত তাই সে নিজেই নতুনভাবে গ্রাভিটির থিওরি প্রস্তুত করতে থাকে যার ফলে পরবর্তীতে আইন্সটাইনের জেনেরাল রিলেটিভিটির জন্ম হয়।
আইন্সটাইনের জেনেরাল রিলেটিভিটির দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যেটার উত্তর নিউটন দিতে চায় নি। প্রশ্নটা ছিল
" গ্রাভিটি কিভাবে স্পেসের মধ্যে দিয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে? " " এত দূরে থাকা সূর্যের গ্রাভিটি কিভাবে পৃথিবীকে একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে রাখছে?"[১১] এই সাধারণ প্রশ্নের উত্তর এতটাই অসাধারণ ছিল যে পুরো বিজ্ঞান সমাজ সেসময় অবাক হয়ে গিয়েছিল।
জেনেরাল রিলেটিভিটির মতে বস্তু স্পেসকে বাঁকিয়ে বা Warp করে Curve Shape দিতে পারে। যে বস্তু যত বড় তার Warping Powerও বেশি হবে। গ্রাভিটি মূলত সৃষ্টি হয় স্পেসের এই Curve Shape এর কারণে।[১২]
বিষয়টা ভালভাবে বুঝার জন্য একটা পরীক্ষা করতে পারেন। একটা স্থিতিস্থাপক কাপড় নিয়ে কাপড়ের একদিক একজনকে ধরতে বলুন কিংবা কাপড়টা কোন কিছুর সাথে বেঁধে ফেলুন আর অপরদিকটা আপনি ধরুন, খুব টান টান করে ধরবেন না। এখন কাপড়ের মাঝখানে একটা ভারি বস্তু (গোলাকার কিছু হলে ভাল হবে) রাখলে দেখবেন যে বস্তুটার চারপাশে একটা Curve Shape সৃষ্টি হয়েছে।ঠিক এই ভারি বস্তুর মতই সূর্য সৌরজগতের মাঝে একটা বিশাল বড় গর্তাকৃতি বা Curve Shape এর সৃষ্টি করেছে। (কমেন্টে দেয়া ছবিটা দেখলে ভালভাবে বুঝতে পারবেন)
এখন আপনি যদি কাউকে আপনার ধরে থাকা কাপড়ে কিছু মার্বেল রাখতে বলেন তাহলে দেখবেন মার্বেলগুলো ভারিবস্তুর দিকে যাচ্ছে ,নিউটনের ভাষায় মার্বেলগুলো আকর্ষিত হচ্ছে ভারি বস্তুর দ্বারা।একসময় দেখবেন মার্বেলগুলো সব ভারি বস্তুর সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে।সৌরজগতের গ্রহগুলোকে আমরা এই মার্বেলের মত ভাবতে পারি কিন্তু গ্রহগুলো তো সূর্যের সাথে গিয়ে মিলিত হচ্ছে না! মিলিত না হবার কারণ হল গ্রহগুলোর 'বেগ'।
স্টান্ট বাইকাররা বড় গর্তের মধ্যে গিয়ে গর্তের বাঁকা/অবতল দেয়ালে বাইক চালাতে পারে। তারা এটা করতে পারে বেগের কারণে।ঠিক এভাবেই গ্রহগুলো সূর্যের দ্বারা সৃষ্ট বাঁকা পথে ঘুরছে।
ফিজিসিস্ট John Archibald এই সম্পর্কে বলেন--
" Matter Tells space how to curve. Space tells matter how to move." [১৩]
এখন আপনি যদি মার্বেলগুলোকে কাপড়ে থাকা ভারিবস্তুর পাশে ঘুরিয়ে ছুড়ে মারেন তাহলেও কিন্তু মার্বেলগুলো ভারিবস্তুর সাথে মিলিত হবে।এর কারণ হল কাপড়ের ঘর্ষণ+বাতাসের ঘর্ষণ বলের কারণে মার্বেলগুলোর বেগ একসময় কমে যাবে ফলে ভারি বস্তুর সাথে মার্বেলগুলো মিলিত হবে। ঘর্ষণ বল থাকায় নিউটনের Law Of Inertia/জড়তার সূত্র (বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতে থাকবে )
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু গ্রহগুলোর ক্ষেত্রে এই সূত্রপ্রযোজ্য কারণ স্পেসে ঘর্ষণ বল নেই কারণ স্পেস হল Vacuum। তাই গ্রহগুলো তার বেগ বজায় রাখতে পারছে যদিও সেটা সবসময় বজায় রাখা সম্ভব হবে না ।
এখন মূল বিষয়ে আসি। "এত এত নক্ষত্রের প্রয়োজন কি? এগুলো তো আমাদের কোন কাজে আসছে না। তাহলে এগুলো কি Meaningless না?"- এই প্রশ্নের উত্তর জেনেরাল রিলেটিভিটি দিয়ে সুন্দরভাবে দেয়া যায়।
আইন্সটাইন তার জেনেরাল রিলেটিভিটি তৈরী করে মূলত দুইজন বিজ্ঞানীর চিন্তাধারা প্রভাবিত হয়ে। একজন হলেন নিউটন আরেকজন হলেন Ernst Mach। নিউটনকে সবাই চিনলেও Machকে অনেকেই চিনে না। Mach এর একটা অসাধারণ থিওরি আছে। Mach এর এই থিওরি অনুযায়ী আপনি যে ফোর্স অনুভব করেন সেটা মহাবিশ্বের সকল বস্তুর সমানুপাতিক। যদি মহাবিশ্বের শুধু একটা নক্ষত্র থাকত তাহলে আপনি খুবই অল্প ফোর্স অনুভব করতেন ,যদি দুইটা থাকত তাহলে আরো একটু বেশি বল অনুভব করতেন।[১৪] অর্থাৎ সকল নক্ষত্রের একটা Collective Effect আমাদের উপর কাজ করছে। আইন্সটাইন এই থিওরি দেখে অনেক মুগ্ধ হয়েছিল। আইন্সটাইন এর মতে এই Collective Effect গ্রাভিটির দ্বারা কাজ করে।
গ্রাভিটি সৃষ্টি হয় Curve Shape এর কারণে অর্থাৎ যদি Zoom Out করে মহাবিশ্বকে দেখা যেত তাহলে আমরা একটা Cosmological Map দেখতে পারতাম যা কিনা ম্যাটার এবং এনার্জির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আর আমরা সেই ম্যাপের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আছি।অর্থাৎ অন্যান্য নক্ষত্রগুলো সামগ্রিকভাবে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বন্যা হবার পর মাটির রাস্তাকে লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যায় যে রাস্তায় অনেক আঁকা-বাঁকা পথ সৃষ্টি হয়েছে। সে রাস্তায় যদি আপনি কিছু মার্বেল ছুড়ে মারেন তাহলে দেখবেন মার্বেলগুলো আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে যাচ্ছে। তেমনি আইন্সটাইনের মতে বন্যা যেমন রাস্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে তেমনি ম্যাটার ও এনার্জিও মহাবিশ্বকে প্রভাবিত করে।
ফিজিসিস্ট Brian Greene এর ভাষায়--
"It's as if matter and energy imprint a network of chutes and valleys along which objects are guided by the invisible hand of the spacetime fabric." [১৪]
শেষ কথা :
কলেজ লেভেলের বিজ্ঞান দিয়ে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে তারা মূর্খ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। কোন কিছু সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম , তার মানে এই না যে সে বিষয়টা Meaningless। অজ্ঞতা কখনো কোন বিষয়ের Meaningless হবার প্রমাণ হতে পারে না। এই বিষয়টা যারা বুঝতে পারে না তারাই মূলত মহাবিশ্বকে Meaningless,Purposeless, Godless মনে করে।
তথ্যসূত্র:-
[১]Beyond Good And Evil by Friedrich
Nietzsche
[২]Encyclopaedia Britannica 2013
[৩]Moral Darwinism By Benjamin Wiker
[৪] The Banalization of Nihilism by Karen Carr
[৫]Shows About Nothing: Nihilism in Popular
Culture from The Exorcist to Seinfeld by Thomas S. Hibbs
[৬]A Meaningful World By Benjamin Wiker
& Jonathan Witt ,Page-148,150
[৭]www
.popsci.com/science/article/2012-01/new-exoplanet-analysis-determines-planets-are-more-common-stars-milky-way
[৮]Physics Of The Impossible by Dr. Michio
Kaku , Chapter-8
[৯]The Case for a creator by Lee Stobel ,Chapter-7
[১০]The Elegant Universe by Brian Greene
[১১]The Fabric Of the Cosmos by Brian Greene ,Chapter-4
[১২]What is Relativity? by Jeffrey Bennett,
Part-03
[১৩]The 4 Percent Universe by Richard Panek
[১৪]The Fabric Of the Cosmos by Brian Greene ,Chapter-4
Thanks for this awesome post!! :)
ReplyDelete